ক্ষুদিরাম, পাবনা প্রতিনিধি : লিচুর রাজধানী হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার লিচুর ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাত্র সিকিভাগ গাছে মুকুল দেখা গেলেও, বেশিরভাগ গাছই মুকুল শুন্য। কৃষকরা বলছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও তারা গাছের পরিচর্যা করেছেন, কিন্তু কেন পর্যাপ্ত মুকুল আসেনি, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের। এতে উৎপাদন খরচ না ওঠায় লোকসানে পড়বেন লিচুচাষীরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এবছর হঠাৎ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লিচু গাছে কাঙ্খিত মুকুল আসেনি। ফলনও হবে অনেক কম।
পাবনার ঈশ^রদী উপজেলার ছলিমপুর, মানিকনগর, জয়নগর, মিরকামারি, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাধা, সদর উপজেলার চকউগ্রগড়, জোয়ারদহ, হামিদপুর, জয়কৃষ্ণপুর, উগ্রগড়, ম্যেগ্রাম, আটঘরিয়া উপজেলার গোপালপুর, ত্রিমোহন, পরানপুর, হিদাশকোল, চাচকিয়া, ষাটগাছা, ডেঙ্গারগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে সারিসারি এমন লিচুর বাগান। এবছর শুধুমাত্র ঈশ^রদীতেই ৩ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০ হাজার মেট্টিকটন। সারাদেশের লিচুর চাহিদার একটি বড় যোগান আসে এখান থেকে।
যে কারণে ঈশ^রদীকে বলা হয় লিচুর রাজধানী। প্রতিবছর ৫ থেকে ৬শ’ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয় এখানে। অনেকেই এই লিচু চাষ করেই সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে এনেছে। কিন্তু প্রতিবছর লিচুর বাম্পার ফলন হলেও, এবার দেখা দিয়েছে বিপরীত চিত্র। গাছগুলোতে দেখা মিলছে না পর্যাপ্ত মুকুলের। মাত্র ২০ ভাগ গাছে মুকুলের দেখা গেলেও, বেশিরভাগ গাছই মুকুল শুন্য। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা ঘিরে ধরেছে লিচুচাষীদের। লিচুচাষীরা প্রতিবছরর মতো এবারও লিচু গাছের পরিচর্যা করেছেন যাথরীতি। কিন্তু সব গাছে কেন মুকুল আসেনি, তা বুঝতে পারছেন না চাষীরা। যে পরিমাণ মুকুল এসেছে, তাতে উৎপাদন খরচ না ওঠায় লোকসানে পড়তে হবে বলে মনে করছেন তারা। তবে, আবহাওয়ার কারণে এমন হতে পারে বলে ধারণা কোনো কোনো কৃষকের।
লিচু চাষী মিজান হুজুর, আজিজল মল্লিক, আলম শেখ, মুন্না সরদার, আয়েজ উদ্দিন জানান, লিচুর বাগান করে এবার চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্য আবাদ না করে লিচু বাগান বানিয়ে অনেকেই লোকসানে পরছেন। হাজার হাজার টাকার সার বিষ দিয়েও বাগানে মুকুল না আসায় তারা লোকসানে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে এবার চলাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
লিচুর ব্যাপারীরা জানান, প্রতিবছর এ অঞ্চলে লিচুর মুকুল আসা অবস্থায় কিনে নেন তারা । এবার তারাও কাঙ্খিত গাছ কিনতে না পেরে হতাশায় দিন পার করছেন। তাদেরও ব্যবসা নেই। উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশি হবে লিচুর। এবার বেশি দাম দিয়ে লিচু খেতে হবে সাধারণ মানুষকে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবছর জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই শীত কমে গরম পড়ে যাওয়ায় কাঙ্খিত মুকুল বের হয়নি। এটি প্রাকৃতিক কারণ। এখানে কৃষক বা কৃষি বিভাগের কিছু করার নেই।
Leave a Reply